বাংলাদেশের উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও শঙ্কার ছায়া ফেলেছে তিস্তা নদীর হঠাৎ পানি বৃদ্ধি। ভারত থেকে ছাড়া অতিরিক্ত পানির ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে ইতিমধ্যেই পানি ঢুকে পড়েছে, ফলে ভেসে গেছে ফসল, এবং আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা।
ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার ফল
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে হঠাৎ করে কয়েক হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিস্তার পানি বাংলাদেশের অংশে প্রবল বেগে প্রবেশ করে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক স্থানে নদীর তীর ভেঙে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভাঙন ও দুর্ভোগ
তিস্তার পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, আদিতমারী, এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলা। এসব এলাকার নিচু গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
গ্রামের মানুষদের কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। গবাদি পশু, খাবার পানি ও শিশুদের নিয়ে পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে আছে।
প্রশাসনের প্রস্তুতি
জেলা প্রশাসন বলছে, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করছেন, তারা এখনো কোনো সরকারি সহায়তা পাননি।
সীমান্তে পানিবণ্টন চুক্তির অনুপস্থিতি
তিস্তা নদী নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই পানিবণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে। চুক্তির অভাবে ভারত যখন ইচ্ছা পানি ছাড়ে বা বন্ধ রাখে, যার খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশের জনগণকে। বর্ষায় হঠাৎ পানি ছেড়ে দিলে বন্যা, আর শুকনায় পানি আটকে দিলে চাষাবাদে দেখা দেয় বিপর্যয়।
জনদুর্ভোগ কমাতে জরুরি পদক্ষেপ দরকার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য দুঃসহ হয়ে উঠছে। এখনই তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে নদীতীর রক্ষা বাঁধ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও স্থানীয় সহায়তা জোরদার করাও জরুরি।
