বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি আয় করাও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শহর ও মফস্বল এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রী এখন পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার পথ খুঁজছে এবং অনেকেই সফলও হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে আত্মনির্ভরতা, সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও বাস্তব জীবনের চর্চা বেড়েছে—মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আয় করছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী
ঢাকার কলেজপড়ুয়া নুসরাত জাহান বলেন, “আমি দশম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াই। মাসে প্রায় ছয় হাজার টাকা আয় হয়। এতে নিজের খরচ চলে যায়, পরিবারের ওপর চাপ পড়ে না।”
রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমি ইউটিউবে শর্ট ভিডিও তৈরি করি। বিজ্ঞাপন আর স্পনসর মিলে এখন মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করি। শিখেছি অনলাইনে কাজ করে উপার্জন কীভাবে করা যায়।”
কোন কোন উপায়ে আয় করছে শিক্ষার্থীরা?
ছাত্ররা বর্তমানে বিভিন্নভাবে আয় করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পথ হলো:
প্রাইভেট টিউশনি:
ছাত্রজীবনের সবচেয়ে পুরনো এবং এখনও জনপ্রিয় উপার্জনের উপায়। অনেক শিক্ষার্থী একাধিক টিউশনি করে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে।
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং:
বিভিন্ন স্কিল যেমন কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার পর অনেকেই Fiverr, Upwork, Freelancerএর মতো প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে।
ইউটিউব ও ব্লগিং:
অনেকে নিজেদের আগ্রহ ও জ্ঞানের ভিত্তিতে ইউটিউব চ্যানেল চালিয়ে বা ব্লগ লিখে আয় করছে বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ থেকে।
ডিজিটাল পণ্য বা অনলাইন কোর্স বিক্রি:
যেসব শিক্ষার্থীর কোনো বিষয়ে ভালো দক্ষতা আছে, তারা সেটি ভিডিও টিউটোরিয়াল আকারে তৈরি করে বিক্রি করছে। কেউ ডিজাইন, টেমপ্লেট বা ই-বুক তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট:
অনেক ছাত্রছাত্রী এখন ছোট ব্যবসার ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম পেজ পরিচালনার কাজ করছে মাসিক সম্মানীর ভিত্তিতে।
শাড়ি, কসমেটিকস, হস্তশিল্প—এমন নানা পণ্য অনলাইন পেজ খুলে বিক্রি করছে অনেকেই।
শিক্ষকদের পরামর্শ: আয় ভালো, কিন্তু পড়াশোনা আগে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান রেজা বলেন, “শিক্ষার্থীরা আয় করছে—এটা সময়োপযোগী ও উৎসাহব্যঞ্জক। তবে তারা যেন পড়াশোনাকে উপেক্ষা না করে। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আয় ও শিক্ষা একসঙ্গে সম্ভব।”
অভিভাবকরাও সন্তানদের এমন উদ্যোগে গর্বিত হলেও পড়ালেখার ক্ষতি যেন না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
সরকারের দৃষ্টিকোণ ও সম্ভাবনা
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল স্কিল শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তরুণদের কর্মসংস্থান তৈরিতে ফ্রিল্যান্সিং ও উদ্যোক্তা তৈরির দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।”
