ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আজকের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইসরায়েলি অবরোধ এবং টানা যুদ্ধের ফলে উপত্যকাটিতে মারাত্মক খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে শিশুরা, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে লাখো মানুষ। বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপের মুখে আজ থেকে ইসরায়েল আংশিকভাবে গাজার তিনটি এলাকায় মানবিক বিরতি ঘোষণা করেছে, তবে তা বাস্তবতার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
শিশুদের মৃত্যু ও তীব্র দুর্ভিক্ষ
গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ৭ মাস বয়সী এক শিশু অনাহারে মারা গেছে, যার ওজন জন্মের সময়ের চেয়েও কম ছিল। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, অন্তত ৬৬ হাজার শিশু বর্তমানে গুরুতর পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
জাতিসংঘ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) মতে, গাজা এখন “পুরোপুরি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে” রয়েছে। ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ, পণ্য প্রবেশ নিষেধ এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো একেবারেই ব্যাহত হচ্ছে।
সীমিত সহায়তা ও মানবিক বিরতি
চলমান সংকট মোকাবেলায় আজ শনিবার থেকে ইসরায়েল গাজার তিনটি এলাকায় — আল-মাওয়াসি (খান ইউনুস), দির আল-বালাহ ও গাজা সিটি — প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত মানবিক বিরতি ঘোষণা করেছে। এই সময়ের মধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আজ প্রথমবারের মতো গাজার আকাশে খাদ্য ও ওষুধ এয়ারড্রপ করেছে। তবে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এ পদক্ষেপকে অপ্রতুল এবং প্রতীকী বলে আখ্যায়িত করেছে।
আজ গাজা উপকূলের দিকে সহায়তা নিয়ে যাওয়া একটি বেসরকারি জাহাজ “হান্ডালা” কে আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। জাহাজটিতে মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসাসামগ্রী ছিল। এতে অস্ট্রেলিয়া, ইটালি, মালয়েশিয়া সহ বহু দেশের নাগরিক ছিলেন। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান সরকার এই বিষয়ে কনস্যুলার সহায়তা নিশ্চিত করেছে এবং “ফ্লোটিলা কোলিশন” নামক মানবিক জোট এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক চাপ ও সহায়তা
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্কসহ একাধিক দেশ গাজার অবস্থাকে “মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি” বলে উল্লেখ করেছে। জাতিসংঘ বহুবার ইসরায়েলকে অনুরোধ করলেও, সীমান্তে আটকে রয়েছে শত শত খাদ্য ও ওষুধবাহী ট্রাক।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, গড়ে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাকের প্রয়োজন হলেও বর্তমানে গড় সহায়তা পাচ্ছে মাত্র ৭০–৯০ ট্রাক।
