বৃহস্পতিবার , ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. প্রবাস
  10. বানিজ্য
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. সাহিত্য

পুলিশের তৎকালীন আইজি তাঁর জবানবন্দীতে যা বললেন ,

প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫ ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ


“র‌্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আমাকে জানান, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দি আছেন। আমি যোগদানের পর র‌্যাব ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র‌্যাবের এডিজি (অপস) ও র‌্যাব ইন্ট সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দি থাকার বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কাছে একাধিকবার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন বলে অবহিত করেন। কিন্তু পরে তিনি আর কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।

আমি র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি। র‌্যাব অফিসারদের মধ্যে অ্যাডিশনাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামে দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম, যারা বন্দিদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিল।”

তাঁর এই জবানবন্দী একদিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ টেস্টিমনি, যেখানে ব্যারিস্টার আরমান গোপন বন্দিশালায় বিনা বিচারে আটক থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে এটাও স্পষ্ট হয় যে, টিএফআই ছাড়াও আরও অনেক গোপন বন্দিশালা ছিল। এইসব বন্দিশালাগুলোতে দিনের পর দিন গোপনে আটক রাখার যে কৌশল রাষ্ট্র নিয়েছিল, সেটা ছিল এমন এক রাজনৈতিক প্রযুক্তি, যার মধ্য দিয়ে বন্দিদের রাজনৈতিক চেতনা ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয়েছে এবং নতুনভাবে গঠন করারও তাগাদা দেওয়া হয়েছে। টিএফআই সেলের অন্তত অর্ধ শতাধিক কারাবন্দীর অভিজ্ঞতা যখন শুনেছি, তারা যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানে এটা স্পষ্ট ছিল—নির্যাতন এবং অবৈধভাবে তাদের এইভাবে আটকে রাখা তাদের ভাঙেনি; বরং রাজনৈতিকভাবে আরও দৃঢ় ও শক্ত করেছে। অর্থাৎ, নির্যাতন ও গোপন বন্দিত্ব তাদের একদিকে ধ্বংস করেছে, কিন্তু তাদের কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সমাজে যে বৃহত্তর প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছে, সেটা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুনর্গঠনও ঘটিয়েছে।

এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, বিচার প্রক্রিয়ায় টিএফআই সেলের কথা বলতে গিয়ে শুধু আইজিপি মামুন না, অনেকেই শুধু ব্যারিস্টার আরমানের কথাই বলছেন। ব্যারিস্টার আরমান ছাড়াও সেখানে যারা অনশন করেছেন, নির্যাতনের মুখে ভেঙে পড়েননি, শহীদ হয়েছেন, কখনো ফিরে আসেননি, তাদের অনেককে নিয়েও জনপরিসরে আলাপ হয়েছে এবং হচ্ছে। অথচ নির্যাতন নিপীড়নের গল্পের বাইরে আরও বহু সাধারণ ও নিত্যদিনের বেঁচে থাকার কৌশল ছিল টিএফআইতে বন্দীদের; যেমন সামান্য খাওয়া, চব্বিশ ঘণ্টার বড় অংশ হ্যাণ্ডকাপ নিয়ে চলা, হ্যনাডকাপ অবস্থায় ঘুমানর চেষ্টা, ঘর পরিষ্কার, নীরবে সহ্য করা, ইশারায় যোগাযোগ করা, ছোট ছোট সংহতির চর্চা। এগুলো রাজনৈতিকভাবে সমান গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেগুলো টিএফাই নিয়ে জনপরিসরের আলাপে আসে না। এইসব ‘ordinary’ বা সাধারণ বিষয়গুলোও মূলত কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ ছিল, যাকে ট্রায়াল প্রসেসে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

তবে শেষে বলব, র‌্যাবের তৎকালীন প্রধান তাঁর টেনিউরে কেবল ব্যারিস্টার আরমানের প্রসঙ্গ তুলেছেন। এটি টিএফআই বন্দিশালার বিষয়ে সত্য উদ্ঘাটনের একটি প্রতিবন্ধক, এমনকি বলা যায় সেখানে আটক ভিক্টিমদের বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও একটি সীমাবদ্ধতা। কারণ কেবল ব্যারিস্টার আরমানের জোরপূর্বক গুমের ঘটনাই যদি সত্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তাহলে ব্যারিস্টার আরমান ছাড়া সেই সময়ে যারা নীরবে টিকে ছিলেন বা যাদের সংগ্রাম এতটা নাটকীয় ছিল না, তাদের কণ্ঠ ও অভিজ্ঞতা আড়ালে পড়ে যাবে। ফলে এই ধরনের টেস্টিমনি ‘ভালো ভুক্তভোগী’ বনাম ‘কম গুরুত্বপূর্ণ ভুক্তভোগী’-এর বিভাজন তৈরি করতে পারে।

পলিটিক্যাল এন্থ্রপলজিতে একটি বিষয় খুব গুরুত্ব পায়, ‘ordinary’ বা সাধারণদের অভিজ্ঞতা। আর টিএফআইয়ের সাধারণ বন্দীদের জীবনও ছিল রাজনৈতিক। ছোট ছোট বেঁচে থাকার কৌশল, প্রতিদিনকার মানবিক সংহতি, মর্যাদা ধরে রাখার চেষ্টা, এসবই রাষ্ট্রের দমননীতির বিরুদ্ধে টিকে থাকার দীর্ঘ লড়াই ছিল সেইসব ‘সাধারণ বন্দীদের’। তাই কেবল ব্যারিস্টার আরমানের গুমের সাক্ষ্য-টেস্টিমনি নয়, আইজিপির জবানবন্দীতে অবশ্যই তাঁর টেনিউরে টিএফআইয়ের নানান বন্দিশালার প্রান্তে থাকা ক্ষুদ্র (কিন্তু অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ) বন্দীদের অভিজ্ঞতাও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। না হলে সত্য উদ্ঘাটন হয়ে উঠবে, কিন্তু তা হবে খুব ই সংকীর্ণ।

সর্বশেষ - ধর্ম

আপনার জন্য নির্বাচিত