রিজিক বা জীবনের প্রাপ্তি ও উপার্জন বিষয়টি ইসলামী জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের দৃষ্টিতে, রিজিক মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং এটি মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। রিজিক শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, বরং এটি মানব জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা, যেমন খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং নৈতিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু অন্তর্ভুক্ত।
১. রিজিকের মুল অর্থ
রিজিকের অর্থ হচ্ছে “প্রাপ্তি” বা “দানে পাওয়া।” এটি শুধুমাত্র টাকা বা অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের সব ধরনের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা, যা একজন মানুষের সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন নিশ্চিত করে, তা রিজিক হিসেবে গণ্য হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“কোনো প্রাণী নেই, যার জন্য আল্লাহ তার পরিভ্রমণের পথে নির্দিষ্ট রিজিক স্থির করে না।”
(সহীহ মুসলিম)
২. রিজিকের উৎস
ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, রিজিকের আসল উৎস আল্লাহ তায়ালা। মানুষের উপার্জন বা জীবিকা পাওয়া কোনোভাবেই স্রেফ তার নিজের পরিশ্রম বা দক্ষতার ফল নয়। বরং আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, সে যে পরিমাণ রিজিক পাবে, তা পূর্বেই আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেবেন এবং তার যে কোন সংকট থেকে মুক্তি দেবেন।”
(সূরা তালাক, ৬৫: ২-৩)
এই আয়াতটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর রিজিকের পথ সব সময় সুগম ও সহজ করে দেন, যদি আমরা আল্লাহর হুকুম মেনে চলি এবং তাঁর প্রতি ভরসা রাখি।
৩. রিজিকের ধরন
রিজিক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে:
- ঐশ্বরিক রিজিক: যেটি সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দান, যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ, স্বাস্থ্য, এবং জীবনের অন্য সকল সুযোগ-সুবিধা।
- অর্থনৈতিক রিজিক: মানুষের পরিশ্রম বা কাজের মাধ্যমে উপার্জন করা অর্থ।
- আধ্যাত্মিক রিজিক: আল্লাহর হেদায়াত, ইলম, দয়া, এবং আত্মিক শান্তি।
রিজিকের মধ্যে অর্থের সাথে সাথে নৈতিক উপকারিতা, সুখী পরিবার, ভালো সম্পর্ক, সুস্থতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
৪. আল্লাহর উপর ভরসা এবং চেষ্টা
ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষকে অবশ্যই উপার্জনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। তবে, এই চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফল কতটুকু হবে তা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তাই, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং এই বিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
“তোমরা যা উপার্জন করবে, তা একমাত্র আল্লাহরই দানে।”
(সূরা মুমিনূন, ২৩: ৭)
তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ যেহেতু সবকিছু জানেন, তাই তাঁর দেওয়া রিজিকের পরিমাণ মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ীই নির্ধারিত হয়।
৫. রিজিকের প্রশংসা ও শোক
ইসলামে রিজিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি অনেক রিজিক পায়, তবে তাকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে, এবং যারা কম রিজিক পান, তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলা উচিত নয়। বরং তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখলে, আল্লাহ তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবেন।
রিজিক যদি কম হয়, তবে তা আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে দেখা উচিত। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রতি আরো বেশি নেক কাজ, ধৈর্য এবং তাওবা করতে পারে।
৬. আল্লাহর উপর আস্থা
ইসলামিক শিক্ষা অনুসারে, রিজিকের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া বা ভয়ের কিছু নেই। আল্লাহ যাকে চান, তাকে রিজিক দেন, এবং যাকে চান, তাকে রিজিক থেকে বঞ্চিত রাখেন। তবে, মানব জীবনে কষ্টের সময়ে মনোবল হারানো উচিত নয়। বরং এ সময়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করা জরুরি।
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, আল্লাহ তার জন্য পথ দেখান।”
(সূরা আত-তাওবা, ৯: ৫)
উপসংহার
রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং এটি বিশ্বাস, চেষ্টা এবং ধৈর্যের ফলস্বরূপ পরিপূর্ণ হতে পারে। ইসলাম ধর্মে রিজিকের প্রতি আস্থা, কৃতজ্ঞতা, এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তবে, সবকিছুর সেরা উপায় হচ্ছে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখার মাধ্যমে একটি সৎ জীবন যাপন করা।
