রোহিঙ্গা সংকট শুধু একটি মানবিক দুর্যোগ নয়, এটি আজ বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭৫০,০০০ রোহিঙ্গা। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৩–১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এই বিপুল শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এর ফলে দেশটি বহুমাত্রিক সংকটে পড়েছে।
প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের জন্য প্রচুর অর্থব্যয়ের প্রয়োজন হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৯৩৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে জুলাই মাস পর্যন্ত মাত্র ২০–৩০ % অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ না আসলে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে এই বোঝা দিন দিন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
২. নিরাপত্তা হুমকি:
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিন দিন মাদক পাচার, মানবপাচার, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা বেড়ে চলেছে। আরসা (ARSA)-র মতো সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্যাম্পগুলোকে নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে পরিণত করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ, অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে হচ্ছে।
৩. পরিবেশগত বিপর্যয়:
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প বসানোর ফলে ৬,০০০ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। এতে জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ভূমিধস, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েছে।
৪. সামাজিক অসন্তোষ:
রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা অনেক সময় স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, তাদের বঞ্চিত করে রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
৫. কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও প্রত্যাবাসন জটিলতা:
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একাধিক চুক্তি ও আলোচনার পরেও একজন রোহিঙ্গাকেও এখনও ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার না করায় স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের চাপও উল্লেখযোগ্য নয়, ফলে বাংলাদেশ একা এই সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অর্থায়নে দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
মিয়ানমারের উপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, যাতে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।
