ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের নয়াকান্দা গ্রামের।
জাহিদ আমার ছেলে। সে দিনমজুরের কাজ করতো। গত বছর ৮ ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতে আমার ছেলে ও নাফিজ বেপারী (জান্নাতকে) কৈইলাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি ডয়েসের ভাগিনা শাওন ফোন দিয়ে বলে আমার মামার দোকানে সিমেন্টের বস্তা আসছে নামাতে হইবো। তো কাজের কথা বলে রাতে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে একটি বিল্ডিং দেখিয়ে বলে এই বিল্ডিং এ আগুন দিতে হইবো। আমার ছেলে ও জান্নাত অস্বীকৃতি জানালে যে, আমরা তো কাম কইরা খাই, এটা আমরা পাড়ুম না। “না” করাতে শাওন ও তাদের সাথে মুখোশ পড়া আরো ৭-৮ জন আমার ছেলেকে পেট্রোল দিয়ে সাড়া শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। জান্নাত দৌড়ে পালায়। পাশের একটি আম বাগানে আমার ছেলে হুমরি খেয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পড় নাফিজ ওরফে জান্নাত পুনরায় আমার ছেলেকে তুলে আনতে ঘটনা স্থলে গেলে দেখেতে পায় পাশের একটি আমবাগানে খালের ধারে পরে আছে জাহিদ। জান্নাত আমার বড় ছেলেকে ফোন দেয়। আমার বড় ছেলে ও জান্নাত মিলে আমার আগুনে পুড়ানো ছেলেকে তুলে আনে। ঢাকা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করায়। ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ আমার ছেলে জাহিদ এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। মারা যাওয়ার আগে আমার ছেলে মূমুর্ষ অবস্থায় একটি ভিডিও ক্লিপে সকল সত্য ঘটনা বলে যায়।
আমরা মূর্খ মানুষ এতকিছু বুঝি না। স্থানীয় বিএনপি নেতা রশিদ মিয়া ও ওসি মমিন সাহেবের মাধ্যমে থানায় মামলা করি। তদন্তের দায়িত্ব পড়ে লুৎফর সাহেবের কাছে। মা হিশেবে আমি কয়েকবার তদন্ত অফিসার লুৎফর সাহেবের কাছে গিয়ে আমার ছেলে যাদের নাম বলে গেছে তাদের নাম বলি। তদন্ত অফিসার লুৎফর সাহেব বলেন আপনি চলে যান আমরা দেখবো। আমরা আশা রেখেছিলাম পুলিশ সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করবে এবং আসামীদের ধরবে। কিন্তু গত ১ বছর হয়ে গেলো মামলার ১ম আসামী শাওনকে গ্রেফতার করতে পারলো না পুলিশ। অথচ, শাওন দেশেই আছে। নিয়মিত ফেসবুকে সক্রিয় সে।
চার্জশিট ফাইনাল করার পূর্বে তদন্ত অফিসার ও অসি সাহেব আমাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করেই চার্জশিট ফাইনাল করে দেয়। যখন আমারা দেখি আমার ছেলে যাদের নাম বলে গেছে তাদের (প্রকৃত আসামীদের) অনেকের নাম সেখানে নেই তখন আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। আমি বাধী হিশেবে চার্জশিট না রাজি দেই। যা বর্তমানে সি আই ডি অফিসে হস্থান্তর করা হয়েছে। কেন পুলিশ আমাদের সাথে এমন করলো এটা বুঝার বাকি থাকে না। আমরা দরিদ্র পরিবার। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা প্রভাবশালী ও টাকা ওয়ালা। বড় পরিমানের কিছুর বিনিময়ে আমাদের সাথে এমনটা করেছে পুলিশ।
আমরা যখন ঘটাঘাটি শুরু করি, ওই বিল্ডিং টি ছিলো হাসান আলীর। হাসান আলী তার বড় মেয়ে শাহিদাকে বিয়ে দেয় আওয়ামীলীগ নেতা মালেক দেওয়ানের ছেলে কায়েতের কাছে। বিয়ের কিছু বছর পর কায়েত সৌদি আরবের ব্যবসায় নিজের মতো করতে চাইলে তার অন্য তিন ভাই যুবলীগ নেতা রতন দেওয়ান, বিদেশ থাকা এমদাদুল ও মাসুমের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাদের বাবা মালেক দেওয়ান ও মা নাজমা বেগম রতন, এমদাদুল ও মাসুমের পক্ষ নেয়। একদিন এই ক্ষোভ ধরে রাতের আধারে কায়েতের স্ত্রী ও তাদের বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে হকিস্টেক দিয়ে সুইচ অফ করে পিটায় যুবলীগ নেতা রতন দেওয়ান। তখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমল। তাই কেউ কোন প্রতিবাদ
করতে সাহস পায়নি। হাসান আলী তার মেয়ে শাহিদাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। এমদাদুল দেওয়ান সৌদি থেকে দেশে ছুটিতে আসলে তাদের চাচাতো ভাই কৈলাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান ডয়েসের সহযোগিতায় তার ভাগিনা শাওনকে দায়িত্ব দেয় বিল্ডিং এ আগুন দিয়ে শাহিদা ও তার পরিবারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য। সে অনুযায়ী তারা পরিকল্পনা করে কায়েতের স্ত্রীর বাবার বাসায় আগুন দিতে কাজের কথা বলে রাত ১২ টায় জাহিদ ও জান্নাতকে নিয়ে যায় শাওন। ওই বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি যেতেই আরু ৭-৮ জন মুখোশ পড়া লোক আসে। জাহিদ ও জান্নাত আগুন দিবে না বললে জাহিদকে শাওন ও বাকিরা ধরে পেট্রোল দিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ছেলে মৃত্যুর আগে মুখোশধারীদের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করে। মূলত তারা ছিলো, এমদাদুল দেওয়ান, রতন দেওয়ান হাবিবুর রহমান ডয়েস, মোতালেব শিকদার, চয়ন, রোমন, রাতুল দেওয়ান ও ছাত্রলীগ নেতা মুসলেম উদ্দীন পায়েল। তাছাড়া জান্নাতকে জিজ্ঞেসের আওতায় আনলে ও খুনী শাওনকে গ্রেফতার করতে পারলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসবে। মালেক দেওয়ান ও হাসান সাহেবের বাড়ির দূরত্ব ৫ মিনিটের পথ।
আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর মালেক দেওয়ানের স্ত্রী ও কিছু মহিলা কয়েক দফায় আমার কাছে আসে আমাকে বলে, “যেমনেই হোক তোমার এক ছেলে মারা গেছে এটার মিল মীমাংসা না হলে তোমার বড় ছেলেরও ক্ষতি হবে”। জাহিদের বাবাকে কয়েক দফায় মালেক দেওয়ান, হাবিবুর রহমান ডয়েস ও মোতালেব শিকদার টাকার বিনিময়ে মীমাংশা করতে বলেন। বি এন পি এর নেতা রশিদ মিয়ার সাথে মালেক দেওয়ানের ব্যাপক অর্থের আদান প্রদানের মাধ্যমে রশিদ সাহেব মামলাটি দুর্বল করিয়ে দেয়। কারন আমরা গ্রামের মানুষ ওত কিছু বুঝি না বলে সকল মামলার সকল দায়িত্ব আমরা রশিদকে দেই। রশিদ আমাদের সাথে গাদ্দারি করে। তারা কৌশল করে জান্নাতকে কে পুলিশে দেয়। জান্নাত কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় কয়েক দফা রতন ও এমদাদুল দেখা করে এবং জান্নাতকে বলে সত্য বলে দিলে তাকে ও তার পরিবারকে প্রাণ নাশ করে দিবে। ১৯ ই আগস্ট ২০২৫ তারিখে এমদাদুল ও রতন জান্নাতকে জামিনে বের করে ওদের কিশোর গ্যাং চয়ন, রোমন, ছাত্রলীগের মুসলেম উদ্দীন পায়েল ও রাতুলকে দিয়ে আমার বাড়ির সামনে বিজয় মিছিল করে। তারা জান্নাতকে জিম্মি করে রেখেছে। জান্নাতকে বাড়ি থেকে বেড় হতে দেয় না। আমরা চার্জশীট না রাজি দিয়েছি ওরা এটা জানতে পেরে আমাদের বাড়ির সামনে এসে রতন দেওয়ান, এমদাদুল দেওয়ান, চয়ন, রোমন, পায়েল, রাতুল, রিমন, সাজ্জাদ আ আরু অনেক কিশোর গ্যাং নিয়ে এসে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমরা ভয়ে সেদিন রাতেই বাড়ি ছেড়ে সুবিধাজক স্থানে চলে আসি। আমাদের জীবন এখন সংঙ্কটপূর্ণ। আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও আমরা আমার ছেলে জাহিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাচ্ছি। কিছু ক্রাইম রিপোর্টার চাচ্ছি যারা এটা নিয়ে কাজ করে আমাদের সহযোগিতা করবে যাতে মামলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে।
